রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
বাসা ভাড়া খুঁজে হয়রান ব্যবসায়ীরা, বাড়িওয়ালার পছন্দ চাকরীজীবী

বাসা ভাড়া খুঁজে হয়রান ব্যবসায়ীরা, বাড়িওয়ালার পছন্দ চাকরীজীবী

স্বদেশ ডেস্ক: ওমর ফারুক। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ছোট একটা কাপড়ের দোকান রয়েছে তার। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বিগত ১০ বছর যাবৎ বসবাস করেন এই শহরে। ছোট একটা ফ্ল্যাটে বেশ সাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটছিল তাদের। করোনা শুরুর পর থেকেই অনান্য ব্যবসায়ীদের মতো বেশিরভাগ সময়ই লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ রাখতে হয় তাকে।

তাই উপার্জন কমে গেছে ওমর ফারুকের। সে কারণে সংসারের খরচ কমাতে ১০ হাজার টাকার ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে একটু কম ভাড়ায় নতুন বাসা খোঁজা শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি ওমর ফারুকের।

কম টাকায় বাসা তো পাচ্ছেনই না, উল্টো নিজের পরিবার নিয়ে থাকার আশ্রয়টুকুও যেন হারাতে বসেছেন তিনি। তার ছেড়ে দেওয়া ফ্ল্যাটটি অন্য এক চাকরীজীবীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। অন্য দিকে ওমর ফারুক গত জুলাই মাসে বহু বাসা খুঁজেছেন ভাড়ার জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ বাড়িওয়ালাই ব্যবসায়ী শোনার পর তাকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাননি। কোন কোন বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া দিতে রাজি হলেও ভাড়ার টাকা তার সাধ্যের বাইরে হওয়ায় নিতে পারেননি তিনি।

ওমর ফারুকের অভিযোগ, করোনার প্রভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাই তাদের কাছে বাসা ভাড়া দিলে ঠিকঠাক মতো ভাড়ার টাকা দিতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন বাড়িওয়ালারা। মূলত করোনার এই সময়ে বাড়িওয়ালারা চাকরিজীবীদেরই বাসা ভাড়া দিতে বেশি আগ্রহী। কারণ চাকরিজীবীরা মাস শেষে বেতন পেয়ে ভাড়ার টাকা সময় মতো পরিশোধ করছে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় লসের অজুহাতে বাসা ভাড়া সময় মতো পরিশোধ করতে পারছেন না।

ওরম ফারুক বলেন, ‘করোনার পর থেকে ব্যবসা ঠিকঠাক মতো চলছে না। অনেক কষ্টে এত দিন বউ বাচ্চা নিয়ে টিকে আছি। কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। মাসে ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় একটা ফ্ল্যাটে ৫ বছর ধরে বসবাস করলাম। কিছুটা খরচ কমাতে গত জুলাই মাসে বাসাটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর পুরো জুলাই মাস বহু বাসা খুঁজলাম। কিন্তু একটা বাসাও মেলেনি। পরে বাধ্য হয়ে পরিবার গ্রামে পাঠাইলাম। বাড়িওয়ালারা বলে চাকরিজীবী ছাড়া বাসা ভাড়া দিবো না। ব্যবসায়ীরা এখন ঠিকঠাক মতো সঠিকভাবে ভাড়ার টাকা দিতে পারে না।’

শুধু ওমর ফারুকই নয়, মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আরিফুর রহমানও একই রকমের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

তিনি মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি ছোট ফার্নিচারের দোকানের মালিক। করোনা শুরুর পর থেকেই তারও ব্যবসায়ীক অবস্থা ভালো নয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে টিকে থাকার লড়াই করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তাই খরচ কমাতে তিনিও ১৫ হাজারের ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে ১০ হাজারের মধ্যে একটি বাসা খুঁজছেন গত ২ মাস যাবৎ। বেশ কয়েকটি বাসা পেয়েও ছিলেন পছন্দমতো। কিন্তু যখনই বাড়িওয়ালা তার দোকানের এবং ব্যবসার করুন অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। তখনি তাকে বাসা ভাড়া দিবে না বলে জানিয়ে দেয়।

আরিফুর রহমান বলেন, ‘বাসা খুঁজতে গিয়ে যেটা মনে হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িওয়ালাদের ধারণা ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা যেভাবে লসের মুখে পড়েছে তাতে বাড়ি ভাড়ার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন না অনেকেই। সে কারণেই বাড়িওয়ালারা চাকরিজীবী ভাড়াটিয়াই বেশি চাচ্ছেন।’

এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মুগদা এলাকার আরেক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মালেক। মুগদায় ছোট্ট একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে আব্দুল মালেকের। সেফ, ম্যানেজার কর্মচারী মিলে সাতজন লোক কাজ করতো তার রেস্টুরেন্টে। তাই একটা বড় চার রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নিজের পরিবারের সাথেই একটা কক্ষে কর্মচারীদেরও রাখতেন তিনি।

কিন্তু করোনায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন আব্দুল মালেক। বেশিরভাগ সময় লকডাউন চলাকালীন খাবার পার্সেল ডেলিভারিতে বিক্রি করতে হয়েছে রেস্টুরেন্টগুলোতে। তবুও তুলনামুলক বিক্রি বহু গুণ কমে গেছে তাদের।

অন্যদিকে আব্দুল মালেকের রেস্টুরেন্টটি ২য় তলায় হওয়ার কারণে বেচা বিক্রি খুম কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সে কারণেই কমে গেছে তার উপার্জনও। তাই নিজের পরিবার ও কর্মচারীদের নিয়ে বসবাস করতে অল্প টাকায় বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছেন আব্দুল মালেক। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা যখন ভালো চলছিল তখন ওই এলাকার সবাই বেশ প্রশংসা করতো তার। কিন্তু এখন সেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বহু খুঁজেও অল্প টাকায় একটা ভাড়ার বাসা জোগাড় করতে পারছেন না।

আব্দুল মালেক বলেন, ‘যখন জাঁকজমক ব্যবসা করছিলাম। তখন আশেপাশের কত বাড়িওয়ালারাও এসে আড্ডা দিতো। গল্প করতো পাশে বসে। আর এখন এই দুঃসময়ে কোথাও একটা বাসা খুঁজে পাচ্ছি না। ব্যবসা মন্দ বলে ভাড়া দিতে চায় না অনেকেই। হয়তোবা অনেকে মুখে সরাসরি না করে না বা বিষয়টি ওভাবে বলেন না। কিন্তু তাদের ভাবে এটাই বোঝা যায় । বাড়িওয়ালাদের কথা শুনে মনে হয় চাকরিজীবীরা, কখনও চাকরি হারাবেন না বা আর্থিক সংকটে পড়বেন না। তাদের পছন্দ চাকরিজীবী ভাড়াটিয়া।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর সেকশন বাড়ি মালিক সোসাইটির সভাপতি মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘আসলে ব্যবসায়ীদের বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছি না ব্যাপারটা এমন নয়। করোনা মহামারিতে সবার অবস্থাই খারাপ হইছে। আমরাও তো ব্যাংকের লোন করে বাড়ি বানাইছি। প্রতি মাসে ব্যাংকের লোনের টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাই আমরাও চাই একজন ভালো ভাড়াটিয়া। যিনি মাসিক ভাড়ার টাকাটা সঠিকভাবে দিবেন। এখন সকল ব্যবসায়ীরাই লসের মধ্যে রয়েছেন। এটা সবাই জানেন। কিন্তু চাকরিজীবীরা মাস শেষে একটা নির্দিষ্ট বেতন পায়। এটা একটা ছোট কারণ হতে পারে।’

একই ধরনের কথা জানিয়েছেন মোহাম্মাদপুর ঢালের বাড়ি মালিক সমিতির সদস্য সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না বিষয়টি এমন না। আমরা বাড়ির মালিকরাও তো এক ধরনের ব্যবসায়ীই। করোনার সময় অনেক বাড়ির ফ্ল্যাট মাসের পর মাস খালি রয়েছে। ভাড়া হচ্ছে না। এতে আমাদেরও তো বিশাল বড় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সবাই চাই এমন একজনকে নিজের বাসাটি ভাড়া দিবো যাতে ভাড়ার টাকাটা সময়মতো পাই। সে ক্ষেত্রে এই চলমান পরিস্থিতে চাকরিজীবীরা মোটামুটি ভালো রয়েছেন। সে কারণে হয়তোবা অনেকের এমনটা আগ্রহ থাকতে পারে।’

ভাড়াটিয়া পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা বলেন, ‘ আসলে বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা বেশ বিপাকে রয়েছেন। করোনা মহামারিতে তারা ক্ষতিগ্রস্থ। তাই বিপাকে পড়া এসব ব্যবসায়ীদের অবশ্যই বাড়ি ভাড়া দেওয়া উচিত। এটা মানবিকভাবে বারিওয়ালাদেরই দেখা উচিত। তবে শুধু মাত্র ব্যবসায়ীরাই যে বিপাকে সেটা নয়, চাকরিজীবীরাও ভালো নেই। করোনায় অনেকের চাকরি চলে গেছে। আবার অনেকের চাকরি থাকলেও বেতন কমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা বহুবার অনুরোধ জানিয়েছি যাতে করোনায় পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল মওকুফ করা হয়। সে ক্ষেত্রে বাড়িওলাদেরও কিছুটা চাপ কমবে। আর বাসা ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে আমরা এর আগেও বহু বার সংশ্লিষ্টদেরও অনুরোধ জানিয়েছি।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877